রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী জনপদ। সুপ্রাচীনকাল থেকে এ জেলা গৌরবময় ও বৈচিত্রপূর্ণ ইতিহাসের অধিকারী। এ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাগট, যমুনা, ধরলা প্রভৃতি নদ-নদী। বৃটিশ সরকারের অধীনে ১৭৬৯ খ্রিঃ রংপুর কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৭৭২ খ্রিঃ পূর্ণাঙ্গরূপ ধারণ করে। প্রথম ইংরেজ কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান চালর্স পার্লিং। বৃটিশ রাজস্ব সংগ্রহ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাই ছিল কালেক্টরেটের লক্ষ্য। ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ব্যারন কারমাইকেল বর্তমান কারমাইকেল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৪৭ এর ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ প্রতিফলিত হতে থাকে। ভাষা আন্দেলনের ক্ষেত্রে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। কারণ উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্তকে এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। ফলে শুরু হয় আন্দোলন। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছালাম, বরকত, রফিক, জব্বার- এদের বুকের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়। রংপুরের জনগণও এ ভাষা আন্দোলনে মিছিল শোভাযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চল হতে লাঠি-সোটা, তীর ধনুক, বল্লম ইত্যাদি সহযোগে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করে ২৮ মার্চ ১৯৭১। ক্যান্টনমেন্টের পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর আক্রোশে অসংখ্য বিক্ষুব্ধ মানুষ এদিন শহীদ হন। বৃহত্তর রংপুর জেলা পাঁচটি মহকুমার সমন্বয়ে গঠিত ছিল (রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা)। ১৯৮৪ সালে এই মহকুমাগুলো জেলায় রুপান্তরিত হয়। রংপুর জেলা ভৌগলিক ক্ষেত্রে তার বৃহৎ ব্যপ্তি হারালেও বর্তমানে ৮টি উপজেলার বিস্তৃত এলাকা নিয়ে কালের অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। দেশের উত্তর জনপদের অন্যতম জেলা হিসেবে রংপুর অনেক গুণী খ্যাতনামা মানুষকে ধারণ করছে, ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি ও সংস্কৃতি চর্চায় রংপুর অনেক এগিয়ে আছে। কৃষিজ উৎপাদনে রংপুর দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। |
No comments:
Post a Comment