------------------------------------------------------------------------

Freelance Jobs

Thursday, February 4, 2010

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা


বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। ১৯৪৭ এর ভারত- পাকিস্তান বিভক্তের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমে সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এই সংক্ষুব্ধ হওয়ার পর্যায়টি ভাষা আন্দেলনের ক্ষেত্রে প্রথম রুপ লাভ করে। কারণ উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্তকে এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। ফলে শুরু হয় বিক্ষোভ আন্দোলন। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সৃষ্টি হয় রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। রংপুরের জনগণও এই ভাষা আন্দোলনে মিছিল শোভাযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতেকালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ বৈষম্য এসব কিছুর বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। এক্ষেত্রে রংপুর পিছিয়ে থাকেনি। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ফলে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বিশাল জনসভায় ঘোষণা করেন ‘‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’। এরপর ২৫ মার্চ এর ভয়াল কাল রাত্রির পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। রংপুরও এই মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠে।

স্বাধীনতাকামী রংপুরের মানুষ ৩ মার্চ প্রথম যুদ্ধ আরম্ভ করে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ রংপুরের শংকু সমজদার। ৩ মার্চে রংপুরে ৩ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং এদের প্রাণদানের মাধ্যমে শুরু হয় রংপুরের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের সকল শ্রেণীর মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ রংপুরে কারফিউ চলে। এ অঞ্চলের মানুষ সশস্ত্র যুদ্ধ আরম্ভ করে ২৪ মার্চ। ২৮ মার্চ রোববার রংপুরের মানুষ জেগে উঠেছিল এক নবচেতনায়। স্বাধীনতা চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চল হতে লাঠিসোটা, তীর ধনুক, বল্লম ইত্যাদি সহযোগে রংপুর ক্যান্টমেন্ট আক্রমণ করে বেলা ৩.০০ টার দিকে। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ রংপুরের মানুষ বিভিন্ন অঞ্চল হতে লাঠিশোঠা, তীর ধনুক, বল্লম,দা,কুড়াল ইত্যাদি সহযোগে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমন করে বেলা ৩.০০ ঘটিকার দিকে। এতে ক্যান্টমেন্টের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈন্যরা এ সমস্ত বিক্ষুব্ধ জনতার উপর ঝাপিয়ে পরে এবং অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। রংপুরের অগনিত মানুষ প্রাণ দিয়ে সৃষ্টি করে এক অবিস্বরণীয় ঘটনা। ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে রংপুরের প্রথম গণহত্যা ঘটে দখিগঞ্জ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এরপর ক্রমান্বয়ে বলারখাইল গণহত্যা, ঝাড়ুদার বিল ও পদ্মপুকুরের গণহত্যা, জয়রাম আনোয়ার মৌজার গণহত্যা, সাহেবগঞ্জের গণহত্যা, লাহিড়ীরহাটের গণহত্যা, ঘাঘটপাড়ের গণহত্যা, নিসবেতগঞ্জ গণহত্যা, দমদমা ব্রীজ গণহত্যা, জাফরগঞ্জ গণহত্যা প্রভৃতি নৃশংস হত্যাকান্ডে রংপুরবাসী তাদের প্রিয়জনকে হারায়। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলকসা অনুযায়ী ৩০শে এপ্রিল ১৯৭১ রংপুর কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থারত (অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন, অধ্যাপক রাম কৃষ্ণ অধিকারী ও অধ্যাপক সুনীল চক্রবর্তী) অধ্যাপকগণকে রাতের অন্ধকারে নির্মমভাবে হত্যাকরে দমদমা ব্রিজের পার্শ্বে এক বাঁশঝাড়ে গণ কবর দেয়। এছাড়াও অধ্যাপক কালাচাদ রায় ও তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয় এবং এই ধারাবাহিকতায় হত্যা করা হয় অধ্যাপক আব্দুর রহমান ও অধ্যাপক সোলায়মানকে। এ সময় হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কেন্দ্রস্থল ছিল রংপুর টাউন হল।

সময়ের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র রংপুরে। ১২ ডিসেমবর রংপুর সেনানিবাস ছাড়া সমগ্র রংপুর মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৩ ডিসেমবর গংগাচড়া থানায় সর্বপ্রথম ২১২ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। ১৫ ডিসেমবর তিস্তা ব্রীজে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। ১৬ ডিসেমবরও রংপুর শহর ও শহরতলীতে লড়াই চলতে থাকে। ১৭ ডিসেমবর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল। নয়মাস অবরুদ্ধ মানুষ খুঁজে পায় মুক্তির আস্বাদন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অকুতোভয় দেশপ্রেম আর অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রংপুরে উদিত হয় স্বাধীনতার রক্তিম লাল সূর্য।

No comments:

Post a Comment

====================================

Freelance Jobs